দেশের অর্থনীতি যেভাবে বড় হচ্ছে, তার সমান্তরালে বীমার প্রয়োজনীয়তাও বাড়বে বৈকি। এ অবস্থায় বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জ চিহ্নিতপূর্বক এ খাতের উন্নয়নে সময়োপযোগী কৌশল গ্রহণই প্রয়োজন।
বর্তমানে দেশে বীমা কোম্পানির সংখ্যা ৭৯। এর মধ্যে সাধারণ বীমা কোম্পানি ৪৬টি এবং জীবন বীমা কোম্পানি ৩৩টি। দুঃখজনকভাবে এতসংখ্যক কোম্পানি সত্ত্বেও অর্থনীতিতে এ খাতের অবদান এখনো অনুল্লেখযোগ্যই বলা চলে। তথ্যমতে, জিডিপিতে এ খাতের অবদান মাত্র দশমিক ৫৫ শতাংশ, অথচ ভারতে তা ৪ শতাংশের মতো। মূলত কিছু অন্তর্নিহিত সমস্যায় কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বীমার প্রভাব হার (পেনিট্রেশন রেট) বাড়ছে না। এর মধ্যে একটি হলো গ্রাহকের দাবি নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা ও অনীহা। অন্যূন তিন মাসের মধ্যে দাবি নিষ্পত্তির আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকলেও কিছু কোম্পানি অর্থ পরিশোধে অযথা গড়িমসি করে। এমনকি মিথ্যা দাবি সাজিয়ে পূর্বতন তারিখে কাভার নোট ইস্যু এবং অন্য অন্যায্য প্রভাবের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট বীমা গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও আছে কিছু মালিকের বিরুদ্ধে। এতে বীমার প্রতি মানুষের এক ধরনের আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। সংকট রয়েছে দক্ষ জনবলেরও। এতসংখ্যক কোম্পানি, অথচ সেগুলো পরিচালনার জন্য এমডি দূরে থাক, মধ্য থেকে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত ভালো, পেশাদার ও দক্ষ লোকবল পাওয়া দুষ্কর। আবার এজেন্টরাও পলিসি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে মানুষকে যথাযথভাবে বোঝাতে পারছেন না। ফলে মানুষ বীমার ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছে না। সমরূপভাবে উচ্চপরিচালন ব্যয়ও একটি সমস্যা। পরিচালন ব্যয়ের ক্ষেত্রে একটি নির্ধারিত সীমা থাকলেও কিছু বীমা কোম্পানি আয়ের তুলনায় বেশি ব্যয় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আছে সুশাসনের সংকট। সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পদ পূরণের আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকলেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বীমা কোম্পানিতে বর্তমানে সিইও নেই। অনেকটা অ্যাডহক ভিত্তিতে চলছে। তদুপরি রয়েছে পরিবারের নিয়ন্ত্রণ। কোনো কোনো কোম্পানিতে একক বা যৌথভাবে পরিবারের মূলধন বা শেয়ার ধারণ সুনির্দিষ্ট সীমা ছাড়িয়ে গেছে। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোয় পারিবারিক প্রভাব তৈরি হচ্ছে, যা করপোরেট মূল্যবোধ ও সুশাসনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। পণ্যে বৈচিত্র্য ঘাটতিও এ খাতের একটি সমস্যা। এখনো বীমা কোম্পানিগুলো মান্ধাতা আমলের বীমা পলিসি বিক্রি করছে। নতুন প্রডাক্ট নেই বললেই চলে। অর্থনীতির আকার অনুপাতে দেশে বীমা কোম্পানির সংখ্যা অনেক বেশি, অথচ ভারতের মতো বড় অর্থনীতিতে বীমা কোম্পানির সংখ্যা মাত্র ৫২। এটিও প্রভাব হার না বাড়ার কারণ। মোটা দাগে এসবই হলো বর্তমানে বীমা খাতের প্রধান অন্তরায়। এগুলো দূর করতে হবে।
।